
সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে আবেদনটিসংগৃহীত
একটি বড় গাছে লাল আর সাদায় বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘দয়া করে গাড়ি ধীরে চালান, এই জায়গায় আমি আমার মাকে হারিয়েছি’। দুর্ঘটনায় মাকে হারিয়ে ছেলে আসিফ আহমেদ ব্যানারটি গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। রাত বা দিন, ওই গাছের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এ ব্যানার চোখে পড়বেই। আর এতে কোনো চালক বা যাত্রীর সচেতনতায় হয়তো কোনো মা, বোন, বন্ধু বা স্বজন দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেতেও পারেন। শুধু এইটুকুই চাওয়া তরুণ আসিফের।
২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহ সদরের লাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আসিফের মা পলি বেগম দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁর সঙ্গে আরও দুই নারী নিহত হন। আহত হয়েছিলেন আরও সাতজন। মাহিন্দ্র নামের একটি অটোরিকশা কালীগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। ট্রাক পেছন থেকে মাহিন্দ্রে ধাক্কা দেয়। এতে গাড়ি থেকে ছিটকে পড়েন পলি বেগম।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মায়ের দুর্ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলাম। আমাদের এলাকায় বড় গাড়ি বা ট্রাক রাস্তার ছোট গাড়িকে কোনো তোয়াক্কাই করে না। মাহিন্দ্রে মায়ের সঙ্গে আরও অনেকে ছিলেন। ট্রাক চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী। মাহিন্দ্রে পেছন থেকে যখন ট্রাক ধাক্কা দেয়, মা ছিটকে পড়েন সড়কে। ওই অটোরিকশা রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায় আর ট্রাক তার ওপর পড়ে। মায়ের মাথায় চোট লাগে। সেখানেই মারা যান।’
ব্যানারে লিখলেই চালক সচেতন হবেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে আসিফ বলেন, ‘মা আমাদের পরিবারের হাল ধরে ছিলেন। গ্রামে নতুন বাড়ির কাজ দেখতেই সেদিন বাড়িতে যাচ্ছিলেন। মা মারা যাওয়ার পর ওই বাড়ির কাজ আর খুব বেশি এগোয়নি।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী ভাই থাকছে নানাবাড়িতে। আমি ঢাকায়। বাবা আলাউদ্দিন আহমেদ কাজের জন্য থাকছেন নারায়ণগঞ্জে। মা নেই বলে আমাদের পরিবারটা এখন প্রায় অচল হয়ে গেছে। আর কাউকে যাতে আমার বা আমাদের মতো কষ্ট পেতে না হয়। ব্যানার দেখে কেউ যদি সচেতন হয়, এ আশা করা ছাড়া তো আর আমার করার কিছু নেই।’
0 Comments